
বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় ঘোষণা হচ্ছে না আজ।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রায় পড়া শেষ না হওয়ায় এ তথ্য জানান।
এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি।
বিডিআর বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহীনির চেইন অফ কমান্ড ধ্বংস করা। বিডিআর ও সেনাবাহিনীকে সাংঘার্ষিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। আদালত তার পর্যবেক্ষনে এ কথা বলেন।
গত ১৩ এপ্রিল এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে যেকোনো দিন রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। গত ৯ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে ২০১৫ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরো ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাঁড়ায় ৮৫০ জনে।
এ ছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে আরো ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়।
রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু (প্রয়াত) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও মোশাররফ হোসেন কাজল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোশাররফ হোসেন সরদার, শেখ বাহারুল ইসলাম ও জাহিদ সরওয়ার কাজল ।
আসামিপক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল বাসেত মজুমদার, মহসীন রশীদ, এস এম শাহজাহান, এ এস এম আবদুল মুবিন, মো. আমিনুল ইসলাম, দাউদুর রহমান মিনা, শামীম সরদার প্রমুখ। আর রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন হাসনা বেগম।
উল্লেখ্য, ২৫ শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টা ২৭ মিনিটে শুরু হয় সেই কালো অধ্যায়ের। ওই দিন দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক ঢুকে পড়ে। এদের মধ্যে একজন বিডিআর মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। বিডিআরের বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে, তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় তখন এক ভীতিকর বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি হয়। এসময় বিদ্রোহীরা পিলখানার চারটি প্রবেশ গেট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশে-পাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকে। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়ে মেধাবী সেনা কর্মকর্তারা। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে।
৩৬ ঘণ্টার সেই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দুজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
বিদ্রোহীদের হত্যাযজ্ঞ ঘটনায় পুরো বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়। এরপর শুরু হয় বিডিআর পুনর্গঠনের কাজ। বিডিআরের নাম, পোষাক, লোগো, সাংগঠনিক কাঠামো, পদোন্নতি ইত্যাদি ব্যাপারে পুনর্গঠন করা হয়। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
পরিবর্তন করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের আইন। বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড।
পাঠকের মতামত